• শুক্রবার ০৪ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ১৯ ১৪৩১

  • || ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

মধ্যপাড়া খনিতে পাথরের মজুদ বাড়ছে, বিক্রি নেই

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২৪  

দিনাজপুরের পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া খনিতে পাথর উৎপাদন বাড়লেও বিক্রি নেই। এ অবস্থায় খনির ওপর নির্ভরশীল শ্রমিক ও খনি সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর জীবন ও জীবিকা নির্বাহে অপূরণীয় ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

 
বুধবার (২ অক্টোবর) পর্যন্ত খনির ৯টি ইয়ার্ডে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন পাথর মজুদ রয়েছে। বর্তমানে খনিতে ৫টি সাইজে পাথর উৎপাদিত হচ্ছে ৫-২০ (৩-৪) মিমি, ২০-৪০ মিমি, ৪০-৬০ মিমি (ব্লাস্ট), ৬০-৮০ মিমি ও বোল্ডার।  

রেলপথে ব্যবহৃত ৫ লাখ ৭০ হাজার টন ব্লাস্ট পাথর এবং নদী শাসনের কাজে ব্যবহৃত হওয়ার জন্য ২ লাখ ৮০ হাজার টন বোল্ডার পাথর প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কিন্তু বিক্রি কমে যাওয়ার ফলে খনি কর্তৃপক্ষ বিপাকে পড়েছে। দ্রুত এসব পাথর বিক্রি না হলে খনির উৎপাদনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ কারণে মধ্যপাড়া খনি কর্তৃপক্ষ অর্থ সংকটে পড়েছে। ধারদেনা করে খনির ঠিকাদারের বিল এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে।  

গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) খনির ওয়েলফেয়ার ভবন চত্বরে খনি শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি ও পদোন্নতিসহ বিভিন্ন দাবি মেনে নিয়েছে খনির উৎপাদন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। এসময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও খনি শ্রমিক নেতাদের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়া হয়।  

দেশে পাথরের বার্ষিক চাহিদা প্রায় ২ কোটি ১৬ লাখ মেট্রিক টন হলেও এর সিংহভাগ আমদানি করা হয় ভারত ও ভুটান থেকে। আন্তর্জাতিক মানের এবং কম দামে পাথর থাকা সত্ত্বেও, নানা কারণে পাথর ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যপাড়া পাথর ব্যবহারে অনীহা প্রকাশ করছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য দরপত্রের দলে মধ্যপাড়া পাথরের ব্যবহারের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তা পালন করা হচ্ছে না।

এ বিষয়ে খনির একাধিক কর্মকর্তারা জানান, আমদানি পাথরের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি এবং মধ্যপাড়ার পাথরের ট্যারিফ ভ্যালু বৃদ্ধি প্রয়োজন। তারা মনে করেন, এতে পাথরের বিক্রিতে সুবিধা হবে এবং দেশের একমাত্র ভূগর্ভস্থ পাথর খনিটিকেও বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ডিলার জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত পাথর আসছে। ফলে পাথর ব্যবসায়ীরা মধ্যপাড়া খনি থেকে পাথর না কিনে হিলি স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাথর কিনছে। এ কারণেই মধ্যপাড়া খনিতে পাথর বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে।  

দেশের একমাত্র পার্বতীপুরের মধ্যপাড়া কঠিন শিলা খনি বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় ২০০৭ সালের ২৫ মে। উৎপাদন শুরুর পর থেকে নানা প্রতিকূলতার কারণে পেট্রোবাংলা প্রতিদিন তিন শিফটে ৫ হাজার মেট্রিক টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে মাত্র এক শিফটে ৭-৮শ মেট্রিক টনের বেশি পাথর উত্তোলন করতে পারেনি। ফলে ২০১৩ সালের জুন পর্যন্ত ৬ বছরে খনিটি লোকসান দিয়েছে প্রায় শত কোটি টাকা। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ৬ বছরের জন্য খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় বেলারুশের জেএসসি ট্রেস্ট সকটোস্ট্রয় ও দেশীয় একমাত্র মাইনিং কাজে অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান জার্মানিয়া করপোরেশন লিমিটেড নিয়ে গঠিত জার্মানিয়া ট্রেস্ট কনসোর্টিয়ামকে (জিটিসি)।  

বর্তমানে খনি ভূগর্ভে বিশ্বমানের অত্যাধুনিক মাইনিং ইক্যুইপমেন্ট বসানো হয়েছে। ইউরোপিয়ান সুদক্ষ প্রকৌশলী দল ও দক্ষ খনি শ্রমিক দিয়ে পাথর উত্তোলন কাজ চালানো হচ্ছে। পূর্ণমাত্রায় পাথর উৎপাদন করায় ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর থেকে চারবার মুনাফা করে আসছে খনিটি। জিটিসির প্রথম দফা চুক্তির মেয়াদ শেষ হয় ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর। দ্বিতীয় দফা চুক্তির আওতায় ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর থেকে পাথর উৎপাদন করছে তারা। জিটিসি সুষ্ঠুভাবে খনি পরিচালনা করতে পারলে একদিকে দেশের পাথরের চাহিদার অনেকটাই পূরণ হবে, অপরদিকে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়সহ বেকার সমস্যারও কিছুটা সমাধান হবে।   

এ ব্যাপারে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (এমজিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানিকৃত পাথরের তুলনায় মধ্যপাড়া খনি থেকে উৎপাদিত পাথরের গুণমান অনেক উন্নত। মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসির ব্যবস্থাপনায় পাথর উত্তোলন বাড়লেও বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে যাচ্ছে। যা দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ গত সেপ্টেম্বর মাসে শুধু পাথর বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২৮ হাজার ৪০৭ মেট্রিক টন।  

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –