• শুক্রবার ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • কার্তিক ২ ১৪৩১

  • || ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

আগাম ধান কাটা শুরু, কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –

প্রকাশিত: ১০ অক্টোবর ২০২৪  

দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে আগাম জাতের আমন ধান কাটা মাড়াইয়ের ধুম পড়েছে। আশানুরূপ ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে হাসির ঝিলিক।

কৃষকরা বাড়তি লাভ হিসেবে চাষাবাদ করেছেন স্বল্প মেয়াদী এই আগাম জাতের আমন ধান। এ ধানের কাঁচা খড় গো খাদ্য হিসেবে বেশি দামে বিক্রি হওয়ায় বাড়তি আয় হচ্ছে কৃষকের। আগাম জাতের নতুন ধান ঘরে তুলে নবান্ন উৎসবের আমেজ শুরু হয়েছে তাদের। এ এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ সারা বছরই সবুজে ভরা থাকে। জমিগুলোতে তিন থেকে চারটি ফসল হওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা।

উপজেলা কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ২ হাজার ৬৯৫ হেক্টর জমিতে ৯ হাজার ৩২৫ টন আমন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হেক্টর প্রতি এসব ধানের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে গড়ে ৩ দশমিক ৪ থেকে ৩ দশমিক ৬ টন। এর মধ্যে আগাম জাতের ধান রয়েছে হাইব্রিড ও উপশি জাতের তেজগোল্ড, ব্রী-৯০, বিনা-১৭, সম্পাকাটারি, জাঁপাড়ি, ধানিগোল্ডসহ আরো বিভিন্ন জাত। উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের রাজারামপুর, গোপালপুর, জাফরপুর, পলিশিবনগর, শমসেরনগর, কয়রাকোল এলাকায় এই আগাম জাতের ধান সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয়েছে।

সরেজমিনে শিবনগর ইউনিয়ন ও অন্যান্য ইউনিয়নের কয়েকটি মাঠে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে আগাম জাতের আমন ধান কাটা মাড়াইয়ের ধুম পড়েছে। কেউ ধান কাটছেন, কেউ আবার ধান কেটে কাঁধে করে জমি থেকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মাড়াই করে বস্তায় ভরছেন। অনেকে ধান কাটার পর আগাম আলুসহ শীতকালীন রবিশস্য চাষের জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন। এজন্য মাঠে-মাঠে কিষান-কিষানিদের চরম ব্যস্ততা, যেন দম ফেলার ফুসরত নেই তাদের।

অগ্রহায়ণ নয়, নিষ্ফলা আশ্বিনে মঙ্গাজয়ী আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলন ও ভালো বাজার মূল্য কৃষক পরিবারে এনেছে সমৃদ্ধির হাসি। ধানের পাশাপাশি গো-খাদ্যের জন্য কাঁচা খড়ের রমরমা ব্যবসা চলছে। চাহিদা থাকায় মাঠে মাঠে ধানের কাঁচা খড় কেনার জন্য মৌসুমী খড় ব্যবসায়ীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। ধান কাটা-মাড়াই শেষে তারা খড় কিনে বাজারে বিক্রি করে ভালো লাভবান হচ্ছেন।
অন্যদিকে, কৃষক মাঠের খড় বিক্রি করে কিছুটা চাষের খরচ তুলছেন। বাজারে ধানের দামের সাথে খড়ের উচ্চমূল্য পেয়ে বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন ক্ষুদ্র-প্রান্তিক কৃষকরা। এ বাড়তি আয়ে আলুসহ অন্যান্য রবি ফসল চাষে খরচ মেটাচ্ছেন তারা।

স্থানীয় কৃষক ওয়াহেদুল চৌধুরী বলেন, ‘এক সময় আগাম আলু চাষের জন্য জমি ফেলে রাখা হতো। এখন স্বল্প জীবনকাল সম্পন্ন আগাম জাতের ধান আবিষ্কার হওয়ায় জমি ফেলে রাখা হয় না। ধানের পর আগাম আলু চাষ করলে আলুর ফলন ভালো হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ জমিগুলোতে প্রতি বছর আগাম ধান, আলু, ভুট্টাসহ চার ফসল উৎপাদন হচ্ছে। এতে করে আমরা লাভবান হচ্ছি।’ কৃষক ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘এ বছর তিন বিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান লাগিয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ফলন ভালো হয়েছে, ইতোমধ্যে ১ এক বিঘা জমির ধান কেটেছেন। বাজারে দাম ও পেয়েছেন ভালো। বর্তমান বাজারে প্রতি বস্তা কাচা ধান বিক্রি হচ্ছে ১৭ শ’ থেকে ১৮ শ’ টাকা দরে। ধান কাটা শেষে এসব জমিতে আগাম আলু রোপণ করা হবে।’


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রুম্মান আক্তার বলেন, ‘কৃষকেরা আগাম আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন, ধান কাটার পর ওই জমিতে আগাম আলু রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন তারা।’

– কুড়িগ্রাম বার্তা নিউজ ডেস্ক –